Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ভূউপরিস্থ পানি সংগ্রহ প্রযুক্তি

ভূউপরিস্থ পানি সংগ্রহ প্রযুক্তি
প্রকৌশলী মো: জিয়াউল হক
বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ এবং নদীমাতৃক দেশ। এ দেশে ছোটবড় প্রায় ৩২০টি নদ-নদী রয়েছে। তন্মধ্যে ৫৭টি আন্তদেশীয় নদ-নদী দেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হয়েছে। ভূউপরিস্থ পানিসম্পদ বলতে দেশের ওপর পতিত বৃষ্টিপাত এবং বহির্দেশ থেকে আগত জল প্রবাহকে বুঝায়। দেশে ভূউপরিস্থ মোট পানিসম্পদের পরিমাণ ১,৩৫০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার (বিসিএম)। তন্মধ্যে নদ-নদীতে ১,০১০ বিসিএম এবং বাকি ৩৪০ বিসিএম বার্ষিক বৃষ্টিপাত (২০০০-২৫০০ মিমি)। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে ভূউপরিস্থ পানির সর্বনিম্ন প্রবাহ ২৯ হাজার ঘনমিটার/সেকেন্ড এবং সর্বোচ্চ প্রবাহ ১৩৭.৭০ লক্ষ ঘনমিটার/সেকেন্ড। ভূউপরিস্থ পানি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে (জুন-সেপ্টেম্বর) নদ-নদী, খাল-নালা, হাওর-বাঁওড় ও বিলে থাকে এবং পরবর্তীতে সাগর-মহাসাগরে পতিত হয়। তাই সারাবছর ভূউপরিস্থ পানি  কৃষি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সেচের অবদান অপরিসীম। দেশে খাদ্য উৎপাদনে দুই ধরনের সেচ কার্যক্রম প্রচলিত আছে-বৃহৎসেচ ও ক্ষুদ্রসেচ। রবি মৌসুমে ক্ষুদ্রসেচের মাধ্যমে দেশের সেচকৃত জমির প্রায় ৯৫% এবং বৃহৎ সেচের মাধ্যমে প্রায় ৫%। বর্তমান সরকার সেচ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। দক্ষ সেচ ব্যবস্থাপনায় সেচের পানির অপচয় রোধ করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও সেচ খরচ হ্রাসের নিমিত্ত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেচ কাজে ভূউপরিস্থ পানির সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও যথাযথ ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে সারাদেশে ২০২০-২১ সেচমৌসুমে ভূউপরিস্থ পানির সেচ ২৭% এ উন্নিত হয়েছে। বর্তমানে ভূউপরিস্থ পানিসম্পদের ১.৩৪% সেচ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভূউপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধিতে নিন্মবর্ণিত প্রযুক্তি গ্রহণ করা যেতে পারে।
ড্রেজিং/খনন/পুনঃখনন/সংস্কার: ভরাট বা হাজামজা নদী, খাল-নালা, ডোবা-বিল, পুকুর ড্রেজিং/খনন/পুনঃখনন/সংস্কারের মাধ্যমে পানি প্রবাহের গভীরতা ও প্রস্থ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সৃষ্ট জলাধারে ভূউপরিস্থ পানি প্রাপ্যতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ড্রেজার, ল্যান্ড বেইজড এক্সেভেটর এবং এ্যাম্ফিবিয়ান এক্সেভেটর মেশিন খনন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। উক্ত কার্যক্রমে কৃষি, মৎস্য, নৌ-চলাচল, ভূগর্ভস্থ পানি পুনর্ভরণ বৃদ্ধি এবং  ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন হ্রাস পাচ্ছে। সেইসাথে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ এবং সেচ খরচ কমে যাচ্ছে। ফলে উপকূলীয় অধঃপতিত জমি সেচের আওতায় আনয়ন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণসহ আবাদি জমি, ফসলের নিবিড়তা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে এলাকাভেদে অনেক নদী/খাল/নালার পাড় গ্রামীণ রাস্তা এবং নৌপথে কৃষি যন্ত্রপাতি ও উৎপাদিত ফসল পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্ণিত কার্যক্রমে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিএডিসি, এলজিইডি, বিএমডিএ ও মৎস্য অধিদপ্তর ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে গ্রামীণ আর্থসামাজিক অবস্থার প্রভূত উন্নতি হচ্ছে।
রাবার ড্যাম : যে সকল ঝরণা/পাহাড়ি ছড়ায় সারাবছর কিছু না কিছু পানি প্রবাহিত হয়, সে সকল ঝরণা/পাহাড়ি ছড়া অথবা সমতল ভূমির অনুরূপ নদীতে আড়াআড়িভাবে আধুনিক প্রযুক্তির রাবার ড্যাম (জঁননবৎ উধস) নির্মাণ করা হয়। উক্ত প্রযুক্তিতে রাবার ব্যাগ পানি দিয়ে ফুলিয়ে নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত উজানের পানি ধরে রাখা যায়। আবার অপ্রয়োজনীয় সময় ব্যাগ হতে পানি নিষ্কাশন করলে মাটির সাথে মিশে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে নৌ-চলাচলে অসুবিধা হয় না। ড্যাম নির্মাণের ফলে এলাকায় এক ফসলি জমি দু/তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর এবং ফসলের নিবিড়তা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। দেশে ইতোমধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির ৬৯টি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে।
হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম : যে সকল ঝরণা/পাহাড়ি ছড়ায় সারাবছর কিছু না কিছু পানি প্রবাহিত হয়, সে সকল ঝরণা/পাহাড়ি ছড়া অথবা সমতল ভূমির অনুরূপ নদীতে আড়াআড়িভাবে আধুনিক প্রযুক্তির হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করা হয়। উক্ত প্রযুক্তিতে কপাট বন্ধ করে নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত উজান বা ভাটির পানি ধরে রাখা যায়। রাবার ড্যামের তুলনায় হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি খুবই সহজ। এতে অতি অল্প সময়ে উজানের পানি আটকানো ও ছেড়ে দেয়া যায়। প্রয়োজনে ড্যামে আংশিক পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব। এ ড্যাম লবণ পানির অনুপ্রবেশ রোধেও কাজে লাগে। দেশে ইতোমধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির ২টি হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে।
ঝিরিবাঁধ : দেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বিস্তীর্র্ণ উঁচুনিচু ও গাছপালা, বন জঙ্গল বেষ্টিত পার্বত্য এলাকা। অসমতল, বন্ধুর ভূপ্রকৃতি ও দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় মাঠ ফসল উৎপাদনের জন্য তেমন উপযোগী নয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের উদ্যান জাতীয় ফসল উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড়ি ঝরনা বা ছড়ায় আড়াআড়ি যে মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয় তাকে ঝিরিবাঁধ বলে। উক্ত ঝিরিবাঁধের উজানে সৃষ্ট ছোট ছোট জলাধারের সাহায্যে পাহাড়ি এলাকার জমিতে সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধা প্রদান করা সম্ভব। পার্বত্য এলাকায় সর্বমোট ৮৬টি ঝিরিবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
সেচ অবকাঠামো : দেশের ভূউপরিস্থ পানিসম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নদ-নদী, খাল-নালায় আধুনিক প্রযুক্তির সেচ অবকাঠামো যেমন-সাবমার্জড ওয়ার, স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। সাবমার্জড ওয়ার নদী বা খালের আড়াআড়িতে পানির প্রবাহের নির্দিষ্ট উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়। ফলে উজানের পানি জলাধারে থাকার পর অতিরিক্ত পানি চলে যায়। অবকাঠামোটি পানির নিচে অবস্থান করে বলে সাবমার্জড ওয়ার বলে। আধুনিক প্রযুক্তির স্লুইসগেট দ্বারা ভূউপরিস্থ পানি ধরে রেখে জলাধার সৃষ্টি এবং নিষ্কাশন উভয় কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। সেচ অবকাঠামো নির্মাণের ফলে উৎপাদিত শস্য ও        কৃষি যন্ত্রপাতি পরিবহন, সেচ স্কিমে সেচের পানির প্রবাহ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে সহায়ক হয়।  
আইল ব্যবস্থাপনা : সমতল জমি চাষের প্রাক্কালে ১৫-২০ সেমি. উঁচু করে আইল বেঁধে বৃষ্টি/বন্যার পানি ধরে রেখে জলাধার তৈরি করা যেতে পারে। অথবা জমিতে ক্ষুদ্রাকার জলাধার নির্মাণের লক্ষ্যে জমির তুলনামূলক নিচু অংশে অথবা সুবিধাজনক স্থানে জলাধার নির্মাণ করা যায়। উভয় প্রযুক্তিতে কয়েক দিনের সেচ প্রদান করা সম্ভব।
বৃষ্টির পানি সংগ্রহ : পৃথিবীর পানিসম্পদের মধ্যে বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ, নিরাপদ এবং বিপদমুক্ত। পানি সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং জনসংখার বৃদ্ধির মতো চলমান সমস্যাসমূহ মিটাতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ একটি পুনঃব্যবহার পদ্ধতি। বৃষ্টির পানিকে গড়িয়ে যেতে না দিয়ে পুনরায় ব্যবহারের নিমিত্ত জলাধার/ট্যাংকে সংরক্ষণ করাকে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ বলে। সাধারণত পাতকুয়া, টিনের চালা/সসার বা ভবনের ছাদে বৃষ্টির পতিত পানি সংগ্রহ করে পাইপের মাধ্যমে ভূতল বা ভূপৃষ্ঠের জলাধার/ট্যাংকে জমা করা হয়। সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি প্রয়োজন অনুসারে খাবার, গৃহস্থালি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনা বা ছাদে সেচ প্রদান করা যায়।
কৃষি প্রধান দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪০% সরাসরি এবং প্রায় ৭৫% প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের ভূউপরিস্থ পানিসম্পদ, যা কৃষি ও মৎস্য সম্পদের উৎপাদনশীল রাখবে, তার নিরাপত্তা বিধানে আধুনিক লাগসই ও টেকসই প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে।

লেখক : সাবেক সদস্য পরিচালক (ক্ষুদ্রসেচ), বিএডিসি। এডাপ্ট রহমান গার্ডেন, ফ্ল্যাট নং ৭/এ, ২৭/২ পশ্চিম নাখালপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৮৭৮১৯৭৯, ই-মেইল :engrziaulhoque@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon